রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
Logo সমাজ উন্নত করতে এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় যুব স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষনের গুরুত্ব অপরিসীম Logo নড়াইলের চিহ্নিত ডিজিটাল প্রতারক বেনজির ঢাকা’র কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে গ্রেপ্তার Logo মানবতার নজির, ৪১ জন শ্রমিকের উদ্ধারের পর বার্তা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির Logo জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সনাতন টিভি’র ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত। Logo নড়াইলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু Logo বীরগঞ্জে জাতীয় যুব উন্নয়ন দিবস পালিত Logo বীরগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন Logo ফুলবাড়ীতে উপজেলা আ’লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo নড়াইলে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত Logo নড়াইলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

জীর্ণ কুঁড়েঘরে রুপনার প্রতীক্ষায় মা

সোনার বাংলা নিউজ / ৬৭ বার পঠিত
আপডেট : বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:৪০ অপরাহ্ণ

অনলাইন ডেস্ক: ‘ছোটবেলায় একবার রুপনার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। তবু তাকে আটকানো যায়নি। মাঠে গেলই গেল। ফুটবলের প্রতি তার আগ্রহের কাছে আমরা হেরেছিলাম। এখন আমার মেয়ে দেশের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনায় গর্ববোধ করছি, খুব খুশি লাগছে।’ গতকাল মঙ্গলবার রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে বেড়ে ওঠা নারী সাফ ফুটবলের সেরা গোলরক্ষক রুপনার মা কালোসোনা চাকমা মেয়েকে নিয়ে এভাবেই বলছিলেন।

রুপনা চাকমার মা জানান, তার মেয়ে নিজের আগ্রহ আসে বলে এতদূর দুর যেতে পেরেছে। তবে এতদূর আসার পেছনে মূল কারিগর হলেন ঘাগড়ার শান্তি মনি চাকমা ও বীরসেন চাকমা। তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার মেয়ে বহুদুর এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য সবাইয়ের আর্শীবাদ কামনা করেন।

জানা গেছে, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম ভূইয়োদামের জন্ম রুপনা চাকমার। পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার আগে তার বাবা গাথা মনি চাকমা মারা যান। রুপনা চাকমারা দুই ভাই, দুই বোন, তিনি সবাইয়ের ছোট। তার মা অতিদরিদ্রতার সাথে লড়াই করে রুপনাকে কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় করে তোলেন।

গ্রামের হাছাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পর নানিয়ারচরে উপজেলা পর্যায়ে খেলা খেলতে গিয়ে তার ফুটবল শৈলির নজরে আসে শিক্ষক বীরসেন চাকমার। পরে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঘাগড়াতে নিয়ে যান বীরসেন চাকমা ও শান্তি মনি চাকমা। ঘাগড়া প্রাইমারী স্কুলে ভর্তির পর গোলরক্ষকের প্রশিক্ষণ দেন শান্তি মনি চাকমা। পরে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির পর তার অদম্য শক্তি ও পরিশ্রমে আর্ন্তজাতিক অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলে ডাক পান রুপনা এরপরই তার নামটি ইতিহাস হয়ে গেলো।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে দুর্গম কাঁচা রাস্তা ও বাঁশের তৈরী সাকোঁ পেরিয়ে রুপনা চাকমার বাড়ী। সেখানে রুপনার মা কালোসোনা চাকমা বসে রয়েছেন ভাঙা একটি কুঁড়ে ঘরে। পাশে রয়েছে তার ভাইয়ের বাড়ী। ভাই ও আত্বীয়-স্বজনদের সাথে রুপনা নেপালে গিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছেন তার কথা বলাবলি করছিলেন। সাংবাদিক গেছে জানতে পেরে গ্রামের মুরুব্বীরাও যান সেখানে। গ্রামের মেয়ে রুপনা ও তার দল দেশের জন্য শিরোপা বিজয় ছিনিয়ে আনায় খুশীতে আত্নহারা গ্রামবাসীরা।

কথা হয় রুপনা চাকমার চাচাতো বোন রিপা চাকমার সাথে। তিনি জানান, ‘অনেক দলকে হারিয়ে ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেজন্য তাদের গ্রামের মানুষ খুবই গর্ববোধ করছে। রূপনার খেলা দেখে তিনি আরো অনেকে উৎসাহিত হচ্ছে। রূপনার আপন বড়ভাই জীবন চাকমা জানান, রুপনা ছোটবেলা থেকে খেলা পছন্দ করতো এবং খেলা খেলার জন্য বন্ধু ছেলেদের সাথে মিশতো। বিকেলে কাজের থেকে ফিরে মায়ের থেকে শুনেছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গ্রামের লোকেরা রূপনাকে নিয়ে প্রশংসা করছে।

ভূঁইয়োদামের বাসিন্দা আলো বিকাশ চাকমা জানান, রূপনা অসহায় এক মায়ের সন্তান। বাবাকেও জীবনে দেখেনি। সেই রূপনা আজ আমাদের গ্রামের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। সে এখন দেশের গর্ব এবং আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক। সে দেশ ও জাতির জন্য সম্মান এনে দিযেছে।

মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা বলেন, ২০১২ এবং ২০১৩ সালে রূপনাকে ঘাগড়াতে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে রাজি ছিলো না। ২০১৪ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাকে ঘাগড়াতে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সে সেরা গোলরক্ষক হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করে। তার এ অর্জন শুধু তার নয়। এ অর্জন পুরো দেশবাসীর।

ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান বাসন্তী চাকমা বলেন, ‘রূপনা আমাদের ইউনিয়নের মেয়ে। তার জন্য আমরা গর্ববোধ করছি। কেননা সে আমাদের গ্রামের মেয়ে হয়ে বাংলাদেশের জন্য শিরোপা এনে দিয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যদি সহায়তা করা হয় তবে অনেক ভালো হবে। কারণ তার বাবা নেই। ছোটবেলা থেকে সে তার বাবকে দেখেনি।’

এদিকে, মঙ্গলবার বিকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রূপনা চাকমার গ্রামের বাড়ী ভূইয়োআদামে ও রিতুপূর্ণা চাকমার বাড়ী কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়িতে যান। এসময় দুই ফুটবলার ঋতুর্পনা চাকমা ও রূপনা চাকমার পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে ৩ লাখ টাকা উপহার তুলে দেন। এছাড়া রুপনা চাকমা গ্রামে এলাকাবাসীর সুবিধার জন্য একটি ব্রীজ নির্মাণ ও রূপনা চাকমাকে একটি বাড়ি নির্মাণের আশ্বাস দেন।

এমসয় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল রহমানসহ জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য দপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রিতু ও রূপনা আমাদের রাঙামাটির গর্ব। তাদের এ অর্জন পুরো বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। তাদের এ কৃতিত্বের জন্য তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

Theme Customized By Theme Park BD