কালী পূজা উপলক্ষে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি সীমান্তে একটি মিলনস্থল হলেও স্থানীয়ভাবে এটি ‘কান্নাকাটি মেলা’ নামে পরিচিত।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার গার্ড ফোর্স (বিএসএফ) এর কড়া নজরদারিতে উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের মেছেরঘাট সীমান্ত এবং বিপরীত দিকে ভারতের কুচলিবাড়ি সীমান্তের কাছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
স্থানীয়রা জানান, দুই দেশের মানুষ অনেক দিন পর একত্রিত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে বলে এই মেলাকে সবাই ‘কান্নার মেলা’ নামেই চেনে।
এ সভায় লালমনিরহাটসহ রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক বাংলাদেশি আসেন। বেশিরভাগ মানুষ ভারতে বসবাসরত আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে এসেছেন। কেউ কেউ মেলা দেখতে আসেন।
বহুদিন পর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে দারুণ খুশি দুই বাংলার মানুষ। অনেক দিন পর স্বজনদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তারা নিজেদের মধ্যে উপহার বিনিময় করেন। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে শান্তিপূর্ণভাবে মেলা শেষ হয়। মেলা চলাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সীমান্তে ছিল মানুষের ভিড়। মেলা শেষে দুই দেশের নাগরিকরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সুচিবাই রানী (৬১) বলেন, ‘আমার মেয়ে মারা যাওয়ার আগে এই মেলায় এসেছিলাম। আমি তাকে কিছু খাবার দিলাম। মেয়েটাও আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। পাসপোর্ট তৈরি করার সামর্থ্য নেই। তাই সীমান্তে কান্নার মেলায় এসে ভারতে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেছি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ি এলাকার বিমল চন্দ্র রায় (৫২) বলেন, প্রায় ১৬ বছর পর বড় দাদার সঙ্গে দেখা হয়। আমার যদি পাসপোর্টের সামর্থ্য থাকত, তাহলে অনেক আগেই দাদার সঙ্গে দেখা করতে ভারতে চলে যেতাম। আমার দাদার সাথে দেখা করার পর আমার জীবন নতুন হয়ে উঠল। আমি যদি বেঁচে থাকি এবং ভবিষ্যতে যদি এই সীমান্ত বৈঠক হয়, তাহলে আমরা দুই ভাই আবার দেখা করব।’
ভারতীয় নাগরিক অনিল চন্দ্র (৪২) বলেন, ‘আমার আত্মীয়রা বাংলাদেশে থাকেন। ভারতেও আমার অনেক আত্মীয় আছে। টাকার অভাবে পাসপোর্ট করতে পারছি না। তাই আমি বাংলাদেশে আমার আত্মীয়দের সাথে প্রায় 15 থেকে 16 বছর দেখা করি না। কিন্তু কালী পূজা উপলক্ষে সীমান্তে দেখা করার সুযোগ পেলাম। তাই সকাল থেকে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অনেক দিন পর দাদাসহ বাংলাদেশি আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে খুশি হলাম। মাঝে মাঝে যদি সীমান্তে এ ধরনের বৈঠকের আয়োজন করা হয়, তাহলে আমাদের জীবন রক্ষা পায়।