বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের তিন মামলায় এক আসামির জামিন শুনানি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেন নীরব তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বেসরকারি ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলীর জামিন বিষয়ে শুনানিতে এ প্রশ্ন করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ওই মামলায় জামিন শুনানির জন্য মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দিন ধার্য ছিল। নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শুনানিতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এ ঘটনায় দায়ের করা ৫৬টি মামলার মধ্যে ১২টি মামলার আসামি সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর জামিন শুনানি ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিল হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক তদন্ত করে বিভিন্ন শাখার সুদসহ প্রায় দুই হাজার ৭শ ৩৪ লাখ দুই হাজার ৯৯১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোট ৫৬টি মামলা করে। বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের। .
এসব মামলায় ৮২ জন ঋণগ্রহীতা ছাড়াও বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফকরুল ইসলাম, ডিএমডি ফজলুস সোবহান, সাবেক ডিএমডি শেখ মঞ্জুর মোর্শেদ, মোনায়েম খান, জিএম মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীসহ জিএম এ ২৭ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। . বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা, প্রিন্সিপাল/মেইন ব্রাঞ্চ, দিলকুশা শাখা ও শান্তিনগর শাখাসহ চারটি শাখায় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গুলশান থানায় ২৩টি, মতিঝিল থানায় ১২টি এবং পল্টন থানায় ২১টিসহ মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বেসিক ব্যাংকের ২৭ কর্মকর্তা, ৮২ ব্যবসায়ী ও ১১ জন বেসরকারি জরিপকারীসহ মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন। মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আত্মসাৎকৃত অর্থ সম্পূর্ণ নগদে উত্তোলন করে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্ত করা এবং তাদের জবানবন্দি নেওয়া (১৬১ ধারায়) কঠিন হয়ে পড়েছে। সব সাক্ষী আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া না. বর্ণিত ক্ষেত্রে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং ব্যাঙ্কের বিপুল পরিমাণ নথি থেকে সমস্ত প্রকৃত প্রমাণ শনাক্ত করা সময়সাপেক্ষ। এছাড়া এ মামলায় প্রকৃত আসামি শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। এছাড়া মামলার প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহের জন্য মালয়েশিয়ায় এমএলএআর করা হয়েছে। রিপোর্ট এবং লক্ষণ এখনও পাওয়া যায় নি.
এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বদলি হওয়ায় একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তাদেরও বদলি করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি শনাক্তকরণ ও সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে, সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ এবং বিদেশ থেকে মামলার প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে। এমএলএআর’র এর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ৫৬টি মামলায় আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা উদ্ধার বা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত প্রশ্ন করেন, সাত বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি? বলা হচ্ছে, প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সমস্ত লক্ষণ সনাক্ত করা সময়সাপেক্ষ এবং প্রত্যাশিত সাক্ষীরা সাড়া দিচ্ছে না। কথাগুলো আপত্তিকর। দুদক এসব বললে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? নাটক দেখার মত। আমরা সবাই নাটকটি উন্মোচিত হতে দেখি। কোটি কোটি টাকা লাগবে, দুদক দেখবে?
এ সময় তদন্তে কেন বিলম্ব হচ্ছে তা জানতে চান আদালত। দুদককে কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।