বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
Logo জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সনাতন টিভি’র ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত। Logo নড়াইলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু Logo বীরগঞ্জে জাতীয় যুব উন্নয়ন দিবস পালিত Logo বীরগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন Logo ফুলবাড়ীতে উপজেলা আ’লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo নড়াইলে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত Logo নড়াইলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো শারদীয় দুর্গোৎসব Logo বীরগঞ্জে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে আদিবাসী মিলন মেলায় মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি আদিবাসীদের তীরের মাথায় এখনো লাল সবুজের পতাকা Logo হাটহাজারিতে শারদীয় দূর্গা- পূজার আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo দেশবাসীকে শারদীয় দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানালেন ডাঃ সুমিত রায় চৌধুরী

নড়াইলে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাপ-দাদার সেই পুরনো স্মৃতি লাঙ্গল-গরুর হালচাষ!!

সোনার বাংলা নিউজ / ৩৬ বার পঠিত
আপডেট : শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১:২৮ অপরাহ্ণ

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে: নড়াইলে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী  বাপ-দাদার সেই পুরনো স্মৃতি লাঙ্গল-গরুর হালচাষ। চাষি খেতে চালাইছে হাল, তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল, বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার, তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার বিশ্ব।’ কবির এই অমর পঙ্ক্তিটি বাঙালির জীবনে আবার ফিরে এসেছে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, এক সময় লাঙ্গল-গরুর হাল ছাড়া জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তাই করা যেত না।
কিন্তু কালের আবর্তে তা হারিয়ে গেলেও বাংলার এ অতীত ঐতিহ্যের চিত্র এখনও দেখা যায় নড়াইলের গ্রামগুলোতে। চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলা, আফরা, নলিয়া ও মধুমতি নদী বিধৌত নড়াইলে আদিকাল থেকে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো হাল, লাঙ্গল ও মই। এই অঞ্চলের গৃহবধূরা শাড়ি পরে কোমরে খাবারের গামলা আর হাতে পানির ঘটি নিয়ে সকাল হলেই মাঠের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ ধরে খাবার নিয়ে যেত হালচাষির কাছে। কৃষকরা কাক ডাকা ভোর থেকেই মাঠের প্রান্তরে হালচাষ করত। কেউবা জমিতে বীজ রোপন করত। জমির চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ও মই ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ থাকত। এসবই বইয়ের পাতায় গল্পের মতো শোনায়। কিন্তু শীতকালীন সবজি চাষাবাদ, নিচু জমি কিংবা যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে নড়াইলের কিছু কিছু এলাকার জমি চাষাবাদ করতে এখনও লাঙ্গল-জোয়ালের প্রয়োজন হচ্ছে। কারণ সবজি খেতে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করলে মই দিয়ে সমান করা যায় না।
আবার জমিতে সারিবদ্ধভাবে চারা লাগাতে লাঙ্গলের ব্যবহার করতে হয়। অন্যদিকে, নিচু জমিতে ভারী ওজনের ট্রাক্টর কাদায় দেবে যাওয়ায় কৃষক লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করছেন। কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতানির্ভর যন্ত্র দিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক গরুর লাঙ্গল। তবে এ যুগেও নড়াইলের কিছু কিছু এলাকায় ফুরায়নি হালের গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ। ট্রাক্টর বা পাওয়ার ট্রিলারের আসায় গরু দিয়ে হালচাষ হয় না বললেই চলে। গ্রামীণ সমাজের অনেকেই চাষি গরু পালন ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকেই বাপ-দাদার সেই পুরনো স্মৃতি গুলোকে আঁকড়ে ধরে সময় পার করছেন।
সম্প্রতি নড়াইল সদর উপজেলার ভবানীপুর মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ‘বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙ্গল দিয়ে একজন কৃষক জমি চাষ করছেন। তিনি ভবানীপুর গ্রামের পেশাদার হালচাষি মিজানুর শেখ। এই চাষি বলেন, পূর্বপুরুষের পেশা ছাড়িনি। হাল চাষের জন্য এক জোড়া বলদ গরু, লাঙল-জোয়াল, মই, ছড়ি, গরুর মুখের টোনা লাগে। গরুর লাঙ্গল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। ওপরের মাটি নিচে পড়ে আর নিচের মাটি ওপরে। এতে জমিতে ঘাস কম হয়, আর হাল চাষের সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়ে এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হয়, তেমনি ফসলও ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, বলদ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় তিন-চার বিঘা অন্যের জমি হালচাষ করি। এলাকার প্রায় ১৭-২০টি গ্রামের মধ্যে একাই আমি পেশাদার হালচাষি। সারা বছরই টাকার বিনিময়ে অন্যের জমিতে গরুর লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করি। তবে ট্রাক্টর বা পাওয়ারটিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে। কম সময়ে বেশি জমিতে চাষে সক্ষম হওয়ায় জমির মালিকরা ট্রাক্টর বা পাওয়ারটিলার দিয়ে জমি চাষ করছে। যে কৃষকরা গরু দিয়ে হাল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত কালক্রমে তারা পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। জেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গা গ্রামের অপর এক পেশাদার হালচাষি রনজিত বিশ্বাস বলেন, আমাদের এলাকার অনেক জমি আছে যেগুলোর খালের ওপার।
নিচু এলাকার নরম ভেজা কিংবা ছোট ছোট উঁচু-নিচু জমি। যেখানে চাষ ট্রাক্টর বা পাওয়ারটিলার দিয়ে সম্ভব হয় না। তাই এসব জমিতে লাঙ্গল-গরুর হাল ব্যবহার করি। এ ছাড়া গরুর হাল জমির গভীরে যায়, যা জমির উর্বরতার জন্য ভালো। এ জন্য এসব এলাকায় গরুর লাঙ্গল দিয়ে হালের কদর ও চাহিদা রয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নড়াইল কার্যালয়ের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, হয়তো কোনো কোনো জায়গায় এমন জমি আছে যেখানে হাল চাষের জন্য ট্রাক্টর পাওয়ারটিলার দিয়ে সম্ভব হয় না। তাই এসব জমিতে কৃষক প্রয়োজনে লাঙ্গল-গরুর হাল ব্যবহার করে থাকতে পারেন। তবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এই যুগে পশু দিয়ে হালচাষ ছেড়ে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

Theme Customized By Theme Park BD