গণপরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করে দেশে ফিরে জামায়াতে ইসলামের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরাসরি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতে ইসলামের আমিরকে ‘মানবতাবাদী মানুষ’ বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি তার নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেন, জামায়াতের আমিরের মতো মানবতাবাদী ব্যক্তিকে জঙ্গিবাদের দায়ে কারা কারাগারে পাঠাতে পারে তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে ১৩ ডিসেম্বর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) গ্রেপ্তার করে। এর আগে জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার সময় তার ছেলে ডাক্তার রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ গ্রেপ্তার হন। ছেলে জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য দেশান্তরিত হয় এবং একটি দল নিয়ে বান্দরবান পাহাড়ে যেতে না পারায় তার ছেলে শফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে। পরে জামায়াতের আমির তাকে (ছেলেকে) নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করেন। এসবই প্রমাণিত হয়েছে এবং শফিকুর রহমান এসব কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু তার জঙ্গি সম্পৃক্ততা নূরের ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ’ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ এবং মুক্তিযুদ্ধের পর সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত জামায়াতে ইসলামের নেতাকে ‘মানবতাবাদী মানুষ’ বলে অভিহিত করা হয়। যা স্পষ্ট প্রমাণ করে দেশের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে চলেছেন তিনি।
অবশ্য সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী কার্যকলাপে জড়ানো নূরের জন্য নতুন কিছু নয়। জনপ্রিয়তা পাওয়ার শুরু থেকেই তিনি বেশ কয়েকবার তার চেহারা পরিবর্তন করেছেন। তার ডাকে ডাকসু নির্বাচন থেকে বেশ কয়েকটি বাম দল সরে গেলে নুরুল হক নূর নিজে পদত্যাগ করেননি।
সম্প্রতি দুবাই সফরের সময় ইসরায়েলি লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে নূর ও তারেক, তার সহযোগী ও সমর্থকদের মধ্যে একজন প্রচারণা শুরু করেন যে ছবিটি ছিল ‘ সম্পাদিত’। এই ছবির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ও ছবি পোস্ট করতে থাকেন তিনি।
এমনকি আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদকেও বৈঠকের ঘটনার সমালোচনা করায় তারেক ও নূরের সহযোগীরা শিবির বলে।
নূরের সহযোগী তারেকের ফেসবুক পেজে দেখা যায়, ডাকসুর সাবেক এই ভিপির পক্ষে তিনি বারবার প্রচারণা চালিয়েছেন। এছাড়াও, এই যুবক তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন দেশবিরোধী বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড দিয়ে মিয়ানমারে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার কয়েকদিন পরই একটি ক্যাম্পে গোলাগুলিতে রোহিঙ্গাদের মৃত্যু হয়।
এর বাইরে তারেক একটি ভিডিওতে হিন্দু ধর্মীয় বইকে চটি বলে দাবি করেছেন। উগ্রবাদী বক্তৃতার শাস্তি না পাওয়ায় নূরের এই সমর্থক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
এর আগে তারেক জামায়াতের হয়ে নূর সাফাই (বাংলাদেশ ভারতের পেটে ঢুকবে) গান গেয়েছেন এমন বক্তব্যও প্রচার করেছিলেন। দেশে ফিরে তিনি আবারও সরাসরি জামায়াতে ইসলামের আমিরের পক্ষে কথা বলেছেন। এ ছাড়া নূরের ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে তিনি জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং বিদেশে জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আরও সম্পর্ক গড়ে তোলার কথাও বলেছেন।
২০২১ সালে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলা হয়।।
ওই দিন জুমার নামাজের পর হামলাকারীরা আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে এসে জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরে এ হামলার ঘটনায় যুব অধিকার পরিষদের নেতাসহ ১০ জনকে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, চট্টগ্রাম।