চীন ও শ্রীলঙ্কার অসহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া টাকা ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব দেশ বাংলাদেশকে প্রতিবেদন দিয়ে সহযোগিতা করলেও তারা সহযোগিতা করছে না। বিলম্বের পরও শেষ পর্যন্ত জাপান তাদের প্রতিবেদন পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তবে সে প্রতিবেদন এখনো পায়নি সিআইডি। ওই ঘটনায় ফিলিপাইন ও ভারত মামলায় সহযোগিতার পাশাপাশি সিআইডিকে প্রতিবেদন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশের রাখা ১০ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ ডলার চুরি হয়। এ পর্যন্ত চুরি যাওয়া ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা আদৌ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সময়ের সঙ্গে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
সে সময় বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করে। কিন্তু সেই মামলা টেকেনি। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের টাকা ফেরত ও শাস্তির জন্য রাষ্ট্রীয় আদালতে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আট দেশের অন্তত ৭৬ জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
পুলিশ তদন্তে জড়িত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ফিলিপাইন এবং জাপান। সব দেশের সহযোগিতা সত্ত্বেও চীন ও শ্রীলঙ্কা কিছুই করছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির টাকা ফিলিপাইনের মাকাতি সিটিতে রিজাল ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছে অপরাধীরা। পরে তারা দ্রুত সেখান থেকে টাকা তুলে নেয়। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে ডিএমপির মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ মানি, মানি লন্ডারিং ও প্রিভেনশন অব সাইবার ক্রাইম অ্যাক্টের ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে চীন ও শ্রীলঙ্কা এখন পর্যন্ত সিআইডিকে জানায়নি। এছাড়া জাপান এত সময় না দিলেও শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা এখনও সেই রিপোর্ট পায়নি। তবে ওই ঘটনায় ফিলিপাইন ও ভারতও মামলায় সহযোগিতা করে সিআইডিকে প্রতিবেদন দিয়েছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সাক্ষ্য দিতে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা ফিলিপাইনে যান। তারা সেখানে (ফিলিপাইন) তিনটি আদালতে রিজার্ভ চুরির মামলায় সাক্ষ্য দেয়। আট দিন সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন এসব কর্মকর্তা।
সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রিজার্ভ চুরির পুরো টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু চীন ও শ্রীলঙ্কার অসহযোগিতা এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এই দুই দেশ আদৌ রিপোর্টও করবে কিনা সন্দেহ।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, টাকা ফেরতের বিষয়টি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ মামলায় জেতার পর আরও দুটি মামলা রয়েছে। অনেক ধাপ পরে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশ একভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা করা গেলে তাদের চাপ দিয়ে দ্রুত টাকা ফেরত আনতে পারব বলে মনে করি। সর্বশেষ আদালতের রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) জড়িত।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মালিবাগ সিআইডি সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত দুই দেশের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো পায়নি সিআইডি। এ জন্য তারা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছেন। ওই দুই দেশের মতামত আসলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিল করা হবে। তবে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী কিছু বলেননি।