দিনাজপুরে ঘোড়াঘাটে নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে আজ ১মে সকাল ৭ টায় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শ্রমিকদের, শ্রমিক দিবস পালিত অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা। দুনিয়ার মজদুর এক হও, মহান মে দিবস সফল হোক সার্থক হোক, এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে এক বনাট্য রেলির আয়োজন করেন,রেলিটি রাণীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন যে ১মে হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। প্রতিবছর মে দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। কারণ এই মে দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। আর মে দিবসকে কেন্দ্র করে অনেক ইতিহাস রয়েছে যা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য মে দিবস প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারণ আমাদের জন্য মে দিবসে অন্যতম গৌরবময় দিবস। আর এই দিবসটি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য পালন করা হয়।
নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে। সভায় বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক ইউনিয়নের, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনিছুর রহমান, বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি মোঃ নুর হোসেন,সহ-সাধারন সম্পাদক মোঃ রাসেদুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম, উপদেষ্টা মোঃ বদিউজ্জামান, উপদেষ্টা মোঃ মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (বুলু) বক্তব্য রাখেন, কার্যকারি সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম, প্রমুখ।সকলে দিকর্নিদেসনা মুলক বক্তব্য রাখেন।
মে দিবসের ইতিহাস, শ্রমিকের অধিকার রক্ষা এবং শ্রমিকের প্রতি মর্যাদা এবং সম্মান প্রদান করার জন্য মে দিবস পালন করা হয়। তৎকালীন সময়ের উপর অত্যাচার এবং বর্বর আচরণ করা হতো। ঠিকমতো তাদের বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হতো না, তাই শ্রমিকরা এক সময় রাজপথে নেমে আসে এবং আন্দোলন করে। তাদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী সকল শ্রমিকরা গর্জে ওঠে এবং তাদের দাবি আদায় করে নেয়। আর এভাবে তারা তাদের দাবি আদায় এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে একটি দিনকে ঘোষণা করে নেয় আর সেটি হচ্ছে- ১লা মে। তাই প্রত্যেক বছর মে মাসের প্রথম দিনে মে দিবস পালন করা হয়। আর এ দিবসকে বিশ্ব শ্রমিক দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
তৎকালীন সময়ে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হতো না সেই কারণে তারা রাজপথে নেমে আসে এবং তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। আর সেই থেকে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন যাবৎ তারা বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মিছিল মিটিং করে থাকে এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নিকট তাদের দাবি জানিয়ে থাকে।
তাদের দাবির কথা মাথায় রেখে তাদেরকে সঠিক সম্মান দিয়ে থাকে আর এজন্য বিশ্ব মে দিবস হিসেবে ১লা মে পালন করে থাকে। তবে মে দিবসকে শ্রমিক দিবস হিসেবে বলা হয়।
মে দিবস বা বিশ্ব শ্রমিক দিবস বা শ্রমিক দিবস যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই দিনটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিকেরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যেসকল শ্রমিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান সংহতি জানান হয়ে থাকে। ১৯০৪ থেকে এ দিবসটি বর্তমান পর্যন্ত পালন হয়ে আসছে।
১৮৮৬ সালে ১লা মে শ্রমিকেরা দৈনিক ১২ ঘন্টা কাজ করতেন। তৎকালীন সময়ে আমেরিকার শ্রমিকরা তাদের এই ১২ ঘন্টার কাজ কমিয়ে ৮ ঘন্টায় নিয়ে আসে একটি ধর্মঘটের মাধ্যমে। অন্যদিকে ৪ঠা মে শিকাগো শহরে হে মার্কেট স্কয়ার পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য। সেইসময় ওই সমাবেশে অজ্ঞাত এক বোমা বিস্ফোরণের ফলে একজন পুলিশের মৃত্যু হয়।
আর সেই পুলিশের মৃত্যু কে কেন্দ্র করে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় এবং সেই সময় অনেক শ্রমিক নিহত হন। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হয়ে থাকে এবং তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অটল থাকেন। তাই তাদের দাবি দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ, শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং তাদের কে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক বছর ১লা মে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
তবে বাংলাদেশের মে দিবস পালন করা হয় মে মাসে কিন্তু আমেরিকা এবং কানাডার মে দিবস পালন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসে। তৎকালীন সময়ের প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পহেলা মে তারিখে যে কোনো আয়োজন হানাহানি পর্যবসিত হতে পারে কিন্তু এই দিনে মে দিবস পালন করা হয়। তবে একেক দেশে একেক সময়ে মে দিবস বা বিশ্ব শ্রমিক দিবস পালন করা হয় কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব শ্রমিক দিবস পহেলা মে পালন করা হয়।
১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কে উদ্দেশ্য করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় আর সে প্রস্তাবটি হচ্ছে শ্রমিকের দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণ এবং শ্রমিকদের যথাযথ সম্মান এবং পারিশ্রমিক দেয়া। আর এই প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মে দিবস পালিত হয়ে আসছে বর্তমান পর্যন্ত। আর যখন মে দিবস চলে আসে তখন বিভিন্ন দেশের শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধরনের আচার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকে এবং যে সকল শ্রমিকদের প্রাণহানির কারণে বর্তমানে শ্রমিকরা সম্মান পাচ্ছে সে সকল শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সম্মান জানিয়ে এ দিবস পালন করা হয়।
তাছাড়া বাংলাদেশের মে দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার ফলে এ দিবসকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বিশেষ বাণী দিয়ে থাকেন শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে। এবং সেইসাথে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলো এই দিনটি পালন করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয় এবং সেইসাথে শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, সংস্কৃতি অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে থাকেন। তবে প্রতি বছরেই মে দিবসকে কেন্দ্র করে একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। আর ২০২৩ সালে একটি প্রতিপাদ্য বিষয় রয়েছে। তবে ২০২১ সালে প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- “মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষে মুজিবর্ষে গড়বো দেশ”।